মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এখন ৬৮ বছরে পা দিয়েছে। গত বৃহষ্পতিবার (২৩ জুন) দলটি সারাদেশে উদযাপন করেছে ৬৭ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগও প্রতিষ্ঠার এ দিনটি উদযাপন করেছে ব্যাপক ঢাক-ঢুল বাজিয়ে। সম্ভবত আজ শুক্রবারের পত্রিকায় দলের বার্ষিকী উদযাপনের খবর পড়েই সীমান্ত এলাকা টেকনাফের সাবরাং থেকে জাহেদ হোছাইন মোবাইলটি করেছিলেন। একদম সাত সকালেই জাহেদ ভাইয়ের মোবাইলের রিং দেখে ভেবেছিলাম নাফ নদী দিয়ে বড় চালানের ইয়াবার চালানের খবর হতে পারে। কিন্তু বিষয় তা নয়। তিনি আমাকে খবর দিলেন-টেকনাফে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে কোন অনুষ্টানের আয়োজন করা হয়নি। জাহেদ ভাই বলেন-‘আমি দলের সাবরাং ইউনিয়নের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি গত ২৫ বছর ধরে। কিন্তু সাম্প্রতিক ইউপি নির্বাচন নিয়ে দল আমাকে বহিষ্কার করেছে। বহিষ্কার করলেও আমি দলকে আঁকড়ে ধরে রয়েছি। এ দলই আমার ছাতা। এই ছাতার ছায়ায় আমি আজ আওয়ামী লীগের একজন নগন্য কর্মী হিসাবে পরিচিত -জাহেদ হোছাইন।’ জাহেদ হোছাইনের আফসোসেরও শেষ নেই। যে দলটির নাম নিয়ে এবং যে দলের ছত্রছায়ায় থেকে টেকনাফ সীমান্তের শত লোক কোটিপতি সেই টেকনাফেই আজ দলটির নাম-নিশানা উচ্চারিত হয় না। দলের নাম নেয়া লোকগুলো-‘যখন যেমন তখন তেমন’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই হচ্ছে নিয়তির নির্মম পরিহাস। জাহেদ হোছাইনের কথা শুনে মনে পড়ে গেল ২০০৯ সালের কথা। ২০০৮ সালের নির্বাচনে উখিয়া-টেকনাফ আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসাবে সেদিনের তরুন আবদুর রহমান বদিকে এলাকার লোকজন ব্যাপক ভাবে সমর্থন দিয়েছিলেন। বিএনপি’র আমলে বদির বিরুদ্ধে ডজন ডজন মামলা দেয়া হয়েছিল। বিএনপি’র অত্যাচার নির্যাতনে আমরা মিডিয়া কর্মীরাও সোচ্চার ছিলাম সীমান্তের এই তরুন প্রতিবাদী কন্ঠ আবদুর রহমান বদির পক্ষে। নির্বাচনের পর তরুন সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি সীমান্তে দলটিকে কিভাবে গনমানুষের কাছে নিয়ে যাবেন সেই পরিকল্পনা নিয়ে বসলেন। একদিন টেকনাফ বাস ষ্টেশনের একটি মূল্যবান জমিতে নিয়ে আমাদের দেখালেন-এখানেই ভবন নির্মাণ করে টেকনাফ আওয়ামী লীগের বিশাল অফিস স্থাপন করা হবে। উত্তরে আমি নব নির্বাচিত এমপি বদিকে বলেছিলাম-দলের নাম বিক্রি করে এ জমি নিয়ে সীমান্তের কারবার শুরু হল আরকি। যেমনই বলা বাস্তবে ঘটনাও তাই। সেদিনের এমপি আবদুর রহমান বদিরও হয়েছে আজ দৃশ্যমান পরিবর্তন। এমপি বদি এরিমধ্যে কত ঘটনাই ঘটালেন। এ কারনে সেদিন উপস্থিত টেকনাফের শিক্ষক ও সাংবাদিক আশেকুল্লাহ ফারুকী আমাকে এখনো স্মরণ করিয়ে দেন আগাম ভবিষ্যৎবাণীটি সত্যিতে পরিণত হওয়ার বিষয়টি। হোয়াইক্যংয়ের উলুবনিয়ার আওয়ামী লীগ নেতা হারুন সিকদার গতকাল দুঃখের সাথে বললেন-দলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর খবর যারাই রাখতেন তাদের স্থান এখন দলের ধারে কাছে নেই। যারা এখন দলের নাম নিয়ে আছেন তারা মৌসুমী। কেবল নাফ নদীর ওপার থেকে বড়ি আনার কাজে দলীয় ক্ষমতা ব্যবহারের জন্যই ভিড়েছেন। ওরা জানেন না বঙ্গবন্ধুর দল কি ? কখন এই দলের জন্ম। বাহারছড়া ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুল এ প্রসঙ্গে জানালেন-টেকনাফে আওয়ামী লীগে যারা ভীড়েছেন তাদের চাহিদা কেবল এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান সর্বোপরি দলীয় পদবীটি বাগিয়ে নেওয়া। দলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী তাদের কাছে কোন বিষয় নয়। উখিয়ার আওয়ামী লীগ নেতা আবুল মনসুর চৌধুরীও ক্ষোভ প্রকাশ করে বললেন-উখিয়ায়ও দলীয় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালনের কোন কর্মসুচি ছিলনা। টেকনাফের একজন মৌসুমী নেতার কথা দিয়ে সীমান্তের ক্ষমতার রাজনীতির ইতি টানছি। আর সেই মৌসুমী নেতার এ ঘটনাটি একজন শিল্পপতির মুখে শুনা। মরহুম রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান তখন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। বেগম আইভি রহমান মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী। টেকনাফ সীমান্তের একজন মৌসুমী নেতা গিয়েছিলেন মরহুম জিল্লুর রহমানের বাসায়। তদবির ছিল টেকনাফ পৌরসভার ক্ষমতা বাগানো। টেকনাফের আগন্তুক নেতা ড্রয়িং রুমে বসলেন। দলীয় নেতা-মন্ত্রীর বাসায় আগন্তুকদের জন্য চা-পানির ব্যবস্থা থাকেই। এ কারনে ড্রয়িং রুমে কতজন আগন্তুক তাদের সংখ্যা গণনা করতে পাক ঘর থেকে কাজের মেয়ে (বুয়া) আসে। সেদিন সাদা শাড়ী পরিহীত বুয়া পাক ঘর থেকে ড্রয়িং রুমে মেহমান গননা করতে এসেই পড়েছিল মহা বিপত্তির মুখে। কেননা টেকনাফের সেই মৌসুমী নেতা সাদা শাড়ীর বুয়াকে দেখে অমনি পায়ে ধরে সালাম করতে শুরু করেন। আর বুয়া বেচারি নেতার কবল থেকে রক্ষার জন্য চিল্লাচিল্লি শুরু করেন-আরে আরে কি করেন-আমি কাজের বুয়া-আমি খালাম্মা নই। কিন্তু নেতা কিছুতেই বুয়ার পা ছাড়েন না। তিনি বলেন-বুয়া হইছে কি হইছে সালাম করছি আর কি।
তোফায়েল আহমদ, কক্সবাজারে কালের কন্ঠের সিনিয়র রিপোর্টার এবং আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) ও বিবিসি’র ষ্ট্রিঙ্গার। ২৪-০৬-২০১৬ ইং। –
পাঠকের মতামত